বরগুনা প্রতিনিধিঃ
বরগুনায় জমে উঠেছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। যারা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের টিকেট প্রত্যাশা করেছেন তারা ঢাকায় ও ভোটারদের কাছে দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন। তবে সবার একটাই কথা যিনি মনোনয়ন পাবেন তাঁর পক্ষে সবাই যেন কাজ করেন। সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হল, বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর কবীর, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব মৃধা, আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম. মজিবুল হক কিসলু ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মো: শাহজাহান ও মো: জিয়াউদ্দিন মোল্লা হিমু।
জানা যায়, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর কবীর পাঁচ বছর বরগুনা জেলা পরিষদের প্রশাসক ছিলেন। আছেন প্রায় ৩০ বছর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে। আবদুল মোতালেব মৃধা বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এনজিও ফোরামের সভাপতি। আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা বরগুনা সদর উপজেলার দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ৫ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। অ্যাডভোকেট এম,মজিবুল হক কিসলু ২০২১ সালে আয়লা পাতাকাট ইউনিয়নে নৌকা মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করে প্রথমে জয় লাভ করলেও ওইদিন গভীর রাতে উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বর্তমান জেলা চেয়ারম্যান মো: দেলোয়ার হোসেনের আপন ছোট ভাই নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেনকে মাত্র ৩২ ভোট বেশী দেখিয়ে বিজয়ী ঘোষনা দেওয়ানো হয়। মো: শাহজাহান তিনি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বরগুনা পৌরসভার দুই বার মেয়র হন। মো: জিয়া উদ্দিন মোল্লা হিমু দীর্ঘদিন রাজনীতি করেন। জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য। বাবা জালাল উদ্দিন মোল্লা আওয়ামীলীগের নিবেদিত ছিলেন। আওয়ামীলীগের নেতাদের ছাড়া অন্য দলের কোন প্রার্থীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। গত ২১ আগস্ট বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক জাহাঙ্গীর কবীরকে একক প্রার্থী করার আহবান জানান নেতারা।
সভায় নেতারা বলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর ওপর নির্ভর করেছে। এ কারণে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি সভায় উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়। যেসব নেতা নির্বাচন করতে চান তারা সবাই তৃর্ণমূলে যোগাযোগ শুরু করেছেন এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন।
সভায় আমতলী পৌর মেয়র মতিউর রহমান বলেন, বর্তমান জেলা চেয়ারম্যান মো: দেলোয়ার হোসেনের আওয়ামীলীগের প্রাথমিক সদস্য পর্যন্ত নেই। বিগত ২০০১ সালে বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেন। শুধু তাই নয় দেলোয়ার হোসেন তিন বিদ্রোহী হয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। তারপরও আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক মাননীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা দয়া করে তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমরা তাকে চেয়ারম্যান বানিয়েছি। দেলোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান হয়ে জেলা পরিষদকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছে। তাঁর দুর্নীতির সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হয়। যত নির্বাচন আসে দেলোয়ার হোসেন নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। আমরা যারা দল করি তাদেরকে তিনি চিনলেন না। তিনি তার বৌ ও শ্যালকদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি করা শুরু করলেন। আমার পৌর সভার মধ্য ২০০ দোকার বরাদ্ধ দিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন। এক হাত জমি এক লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীরা দোকান নিয়েছেন। মেয়র জেলা চেয়ারম্যানের বিগত দিনের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলেন ধরেন। একই বক্তব্য দিয়েছেন বেতাগীর পৌর মেয়র এবিএম গোলাম কবির।
তিনি বলেন, আমরা সবাই মনোনয়ন চাইতে পারি। কিন্তু আজকে অঙ্গীকার করতে হবে। মাননীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন আমরা সবাই তাদের পক্ষে কাজ করব। কেহ বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না। সকল বক্তরা বলেন, আমরা ত্যাগি নেতাদের এই পদে দেখতে চাই। যারা দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন। অথচ কিছু পায়নি। শিক্ষিত মার্জিত জেলা পরিষদ পরিচালনা করতে পারেন, এমন একজনকে আমরা চাই। আমাদের দলটি অনেক পুরাতন। অনেক নেতারা আছেন, যোগ্যতা থাকা সত্বেও তারা কিছু পায়নি। তাদের মূল্যায়ন করা উচিৎ। বরগুনা-১ আসনের সংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু বলেন, আমাদের দলের সবাই মনোনয়ন কিনতে পারবেন। কোন বাধা নেই। কিন্তু দল যাকে মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষে সবাই থাকবেন। বরগুনার একাধিক জনপ্রতিনিধিরা বলেন, যাদের কোন দুর্নাম নেই। শিক্ষিত ও স্বচ্চ রাজনীতি করে তাদের মনোনয়ন দেওয়া উচিৎ।
বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, আমি ৫ বছর বরগুনা জেলা পরিষদের প্রশাসক ছিলাম। অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। কোন দুর্নীতি করিনি।
আমাকে মনোনয়ন দিলে সবাইকে নিয়ে জেলার উন্নয়ন কাজ করতে চাই। আবদুল মোতালেব মৃধা বলেন, আমি স্বচ্চ রাজনীতি করি। আমি যদি মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। দলের সবাইকে নিয়ে কাজ করব। জেলা পরিষদকে কেহ আঙ্গুল দিয়ে দেখাবে। আমি যখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। তখনও দুর্নীতির উর্ধে থেকে কাজ করেছি।
আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা বলেন, আমি ৫ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম। আমাকে দুর্নীতি স্পর্শ করেনি। আমি মনোনয়ন পেলে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করব।
অ্যাডভোকেট এম মজিবুল হক কিসলু বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আইন পেশায় আছি। ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে আমাকে মাননীয় সভানেত্রী দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে প্রথমে জয়লাভ করলাম। রাতের আধারে বর্তমান জেলা চেয়ারম্যান মো: দেলোয়ার হোসেন আমার বিজয় ছিনিয়ে নিলেন তার আপন ভাই বিদ্রোহী প্রার্থী মোশররফ হোসেনর জন্য। মাত্র ৩২ ভোট কম দেখালো। এই দেলোয়ার হোসেন ২০০১ সাল হতে নৌকার বিরোধীতা করে আসছে। মাননীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে দুর্নীতিমুক্ত জেলা পরিষদ উপহার দেব। একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি ছাড়া জেলা পরিষদ চালানো সম্ভব নয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস মাননীয় সভানেত্রী সব দিক বিবেচনা করে মনোনয়ন দিবেন। যারা বার বার পেয়েছেন। আবার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যারা কিছু পায়নি। সেই দিক নজরে নিবেন।
উল্লেখ্য, বরগুনার ৪২টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভায় ৫৯৮ জন জনপ্রতিনিধির ভোটে ১৭ অক্টোবর নির্বাচিত হবেন বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
News Desk/ WE