বরগুনা প্রতিনিধিঃ
ছোট ছোট গাছে ঝুলছে থোকা থোকা মাল্টা। একেকটি গাছে ৫০টি থেকে ৮০টি পর্যন্ত। গাঢ় সবুজ রঙের মাল্টাগুলোর কোনো কোনোটিতে হলুদাভ ভাব এসেছে। শুধু মাল্টাই নয়, ২৬০০ স্কায়ার ফিট ছাদে ছোট-বড় ৭০-৮০ টি টব এবং প্লাষ্টিক ড্রামে দেশি-বিদেশি হরেক রকমের ফুল, ফল ও সবজির গাছ লাগিয়ে ছাদ কৃষি গড়ে তুলেছেন একজন কৃষি প্রেমি নাজমুল হাসান মহিউদ্দিন।
নাজমুল হাসান মহিউদ্দিন, ও স্ত্রী আয়শা আক্তার হাসির মতো বরগুনা শহরে অনেকেই ছাদ কৃষিতে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। প্রায় সারা বছরই ছাদ কৃষিতে ফুল-ফল, শাক-সবজি চাষ করছেন তাঁরা। শহরে প্রায় অর্ধশতাধিক ভবনের ছাদে ছাদ কৃষি করার কথা জানা গেছে।
স্বামী-স্ত্রী দুজনে ছেলে মুশফিক হাসান ও মেয়ে মালিহা হাসানকে নিয়ে চাকরি ও ব্যাবসার পাশাপাশি অবসর সময় পার করেন ছাদ বাগানে। সৌখিন মানসিকতায় আগে থেকেই ছাদে ফুল বাগান করে থাকলেও করোনার অবসরে তাদের দু’জনের পরিকল্পনায় সবজি,ফল,ঔষধি বাগানে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা। এভাবে করোনার অবসরে আকারে বেড়েছে তাদের ছাদ বাগান তৈরীর প্রবনতা। এই প্রবনতাকে শুভ উল্লেখ করে প্রতিবেশীরাও অনুপ্রেরণা পেয়ে ছাদে বাগান করাকে ইতিবাচক ও সখ হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের দক্ষিণ মনসাতলী এলাকায় বসবাসরত নিজ পাচতলা বিশিষ্ট বাসার ছাদে কেওড়াবুনিয়া এছাকিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক ও ব্যাবসায়ী নাজমুল হাসান মহিউদ্দিন এবং তার স্ত্রী একমত পোষণ করে চমৎকার সাজিয়ে তুলেছেন ২৬০০ স্কায়ার ফিটের ছাদ বাগান। তিনি সময় পেলেই অবসর সময় পার করেন এই ছাদ বাগানের পরিচর্যা করে ।
প্রায় ৩ বছরের ছাদ বাগানে শতাধিক ফুল, ফল, ওষুধি, রকমারি পাতাবাহারের গাছ আছে। ফুল গাছের মধ্যে রয়েছে নয়নতারা, মাধবীলতা, এলমন্ডা ,বেলী , হাসনাহেনা , জবা , গোলাপ, শিউলি, টগর, গন্ধরাজ , নাইট কুইন বিদেশি ফুলসহ রকমারি পাতাবাহার গাছ।
ফল গাছের মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং কমলা, বারমাসী লেবুগাছ, ২ প্রকার জামবুরা,কাজী পেয়ারা, থাই পেয়ারা, ডালিম, রেডলেডি পেঁপে, চায়না লেবু, পাতি লেবু,বড়ই,লাল-সাদা জামরুল, মালটা, বরি-৪ , হাড়িভাঙা, ব্যানানা,আম্রপালি আম, থাই বেল, ড্রাগন, আঙ্গুর, আতা,জলপাই, আখঁ ইত্যাদি। ঔষধি গাছের মধ্যে রয়েছে এ্যালোভেরা, পাথরকুচি, তুলসি,পুদিনা, মেহেদী। এছাড়াও সবজি গাছের মধ্যে রয়েছে বারমাসি সজনে, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা, করলা,দুধকুসি,বরবটি, কচুশাক,পুইশাক, কলমিশাক,মরিচ,ক্যাপসিক্যাম, দেশী- বিলেতি ধনেপাতা প্রভৃতি। পশু- পাখির মধ্যে খরগোশ, মুরগী, দেশি-বিদেশি কবুতর, ককাটেল,ঘুঘু, কাকাতুয়া সহ নানা প্রজাতির পাখি। এছাড়াও বাসার বেলকুনিতেও রয়েছে নানান জাতের পাতাবাহারের সমাহার। এবং সবসময় পরিচর্যা ও ছাদঁ পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার জন্য একজন লোক মাসিক বেতন হিসেবে চাকরি দিয়েছেন। তিনি সবসময় এগুলো দেখাশোনা করে।
গোবরসার সহ জৈব ও প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে নিজের তৈরি করা সার যথাযথভাবে প্রয়োগ করে পরিচর্যার ফলে স্বাভাবিক মাটিতে চাষের মতই মাটি, সিমেন্ট ও প্লাস্টিকের টবে ফলন ও উৎপাদন ভালো হচ্ছে। সিমেন্টের ২০টি টবে, মাটির তৈরি ৫০টি টব, ফলের ট্রে এবং প্লাষ্টিক ড্রাম কেটে টব হিসেবে ব্যবহার করে নার্সারী থেকে গাছ এনে বাগান করার পাশাপাশি নিজেরাই কলম করে এবং মৌসুমি ফল – সবজির অবশিষ্ট অংশ থেকে চারা রোপন করছেন তারা। লতানো গাছগুলোতে বাঁশের তৈরি মাঁচা করে সাজানো হয়েছে। এতে ফল ও সবজি যেন থোকায় থোকায় নজর কাড়ছে। অধিক ফলন হওয়ায় পরিবারের চাহিদাও মিটছে তাদের। এমনকি সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব নিয়ে নিজেদের বাগানের ফল- সবজি প্রতিবেশীদের মাঝেও বিলিয়ে দেন তারা।
বাগান পিপাসু নাজমুল হাসান মহিউদ্দিন বলেন, অবসরে মোবাইল আসক্তির বদলে যদি মানুষ ছাদ বাগান বা অনুরুপ বিষয় নিয়ে অনুপ্রেরণা পেয়ে সেটা কাজে লাগাতে পারে। তাহলে নিরাপদ ও সুস্থ্য সমাজ গঠনে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে ।
সখের বসে নিজেদের অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে মুক্ত এই ছাদ বাগান করা। সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে নিজের মনকে প্রফুল্ল ও সজীব করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি আমরা। মুক্ত বিশাল খোলা আকাশে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় প্রজাপ্রতিরাও সেই আনন্দকে উপলব্ধি করতে প্রতিদিন একঘন্টা হলেও দুজনেই যোগ দেই তাদের সঙ্গে। এছাড়াও ফল- সবজি কিনে খাওয়া এবং নিজেরা পরিশ্রম করে তাজা ও রুচিসম্মত খাওয়ার স্বাদ আলাদা। বর্তমানের চেয়েও আরও বড় আকারে বাগান বাড়ানোর ইচ্ছে আছে। তাই ধরে রাখতে চেষ্টা করবো।
তিনি আরো বলেন, ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল এরকম একটি ছাদ বাগান করার এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমি লেখাপড়া শেষ করে চাকরি ও ব্যাবসা করে আমর টার্গেট পূরন করতে পেরেছি। ছাত্র জীবন থেকেই ভালোবাসি সবুজ প্রকৃতি, সবুজ প্রকৃতির মাঝেই বেড়ে ওঠা। তাই এই দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতিকে আকড়ে ধরে রাখতে চেষ্টা করছি। নিজেদের অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে গাছ গুলোর যত্ন করছি নিজের সন্তানের মত করে। প্রতিদিন ছাদে আসতে না পারলে সেদিন মনে হয় যেন আমার ভালো কাটে না। যথাযথ পরিশ্রম করে পরিচর্যার মাধ্যমে বর্তমানে মৌসুমি ফল, সবজি নিজের ছাদ বাগানের গাছ থেকেই খেতে পারছি।
আরো বলেন, আমার ছাদ বাগানে কয়েক শতাধিক গাছ আছে। এসব গাছ ভবন করার সময় আমি টব তৈরি করে নিয়েছি। এছাড়াও লোহার স্ট্রাকচার, তেলের ড্রাম, সিমেন্ট,মাটির বড় বড় টব করে রাখা হয়েছে। ছাদের কোন গাছে কীটনাশক ব্যবহার করি না। প্রতিটি গাছে জৈব সার ও জৈব ভালাই নাশক ব্যবহার করি। আমাদের এই ছাদবাগান দেখে প্রতিবেশীদের মাঝেও বেশ উৎসাহ ছড়িয়ে পড়েছে। আশেপাশে এখন অনেক বাড়িতেই ছাদ বাগান হয়েছে। আমার কাছে এখন অনেকেই ছাদ বাগানের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন।
News Desk/WE