বরগুনা প্রতিনিধিঃ
বরগুনা পৌর শহরে লাইফ কেয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের চিকিৎসার নামে চলছে ভয়াবহ প্রতারণা। বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগীদের ভুল বুঝিয়ে এবং প্রলোভনে বাণিজ্য চলছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে কমিশন পাচ্ছে দালাল চক্র। তবে এ দালাল চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে। কতিপয় দালালকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হলেও জামিনে বের হয়ে বেপরায়া হয়ে ওঠে। এসব দালাল নিয়ন্ত্রণকারী বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।
দেখা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ম নীতি কোনো প্রকার মানছেন না। প্রতিদিন সকাল- বিকেলে মেডিকেলের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে ভেতরে ভর্তি রোগীদের সামনে দেখা যায় দালালদের আনাগোনা। আবার সাংবাদিকরা রিপোর্ট করতে গেলে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হয়।
পৌর শহর এলাকার লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসা মহিউদ্দিন বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য আকবর ডাঃ এর কাছে আসি তিনি আমাদের ব্লাড গ্রুপ টেষ্ট ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য বললে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে প্যাথলজি রুমে গেলে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার সময় নার্সরা শ্লীলতাহানি করে। আমি তখন তাদের উপর রাগ হলাম যে মান, সম্মান, ইজ্জত তো সবারই আছে। এছাড়াও ব্লাড গ্রুপ টেষ্ট করেছে তা সম্পূর্ণ ভূল। পরে ডাঃ কে দেখানোর পর সে প্যাথলজির সদস্যদের উপর রাগ হইছে। এরকম একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন আমদের সাথেই এরকম আচরণ করে থাকে। তাহলে গ্রাম থেকে আসা অসহায় গরীব মা, বোন দের কি অবস্থা হয়। একটি ভূল রিপোর্টে ভূল চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে! তখন রুগীর জীবন মরন নিয়ে টানাটানি। আমরা এর সঠিক বিচার দ্বাবি করছি।
বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি অ্যাড. মির্জা হুমায়ুন কবির বাচ্চু বলেন, বর্তমান সময়ে চিকিৎসা সেবায় একটি বড় বাণিজ্য রয়েছে। যাদের মনিটরিং করতে ব্যর্থ বরগুনার স্বাস্থ্য বিভাগ। ব্যাঙের ছাতার মতো এ সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় সরকারি হাসপাতালের ৯৮ ভাগ চিকিৎসক প্রভাবিত হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে মনিটরিং করে এবং তালিকা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
স্থানীয় সচেতন মহল সাংবাদিক হাসান ঝন্ঠু বলেন, প্যাথলজি বিভাগ চালু করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিপ্লোমাধারী প্যাথলজিস্ট ও ১ জন সুইপার রাখার বিধান। আর মাইক্রোস্কোপ, ফ্রিজ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, অপারেশন থিয়েটার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক কিনিকগুলোর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অধিকাংশ ক্লিনিকে নির্ধারিত ডাক্তার নেই। তারা চুক্তি অনুযায়ী ডাক্তার ডেকে রোগীর অপারেশন বা অন্যান্য চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতে পারেন না। কারণ এ ডাক্তাররা একাধিক ক্লিনিকে চুক্তিবদ্ধ। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পরিদর্শন করেন। রোগীদের সঙ্কটকালীন সময়ে ডাক্তার পাওয়া যায় না। এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। যোগ্যতা সম্পন্ন নার্স সঙ্কট প্রকট। এতে ক্লিনিকের পরিবেশ অনেকাংশে নোংরা থাকে। অনেকে ক্লিনিক ব্যবসার সাথে ডায়াগনস্টিক ব্যবসা জমজমাট করে তুলছেন। এ ক্ষেত্রে নিয়ম নীতি মানা হচ্ছে না। ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানির শেষ নেই। এ সব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডিপ্লোমাধারী প্যাথলজিস্টের অভাব। এর ফলে অহরহ ভুল রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। লাইফ কেয়ার ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অনেক ভুক্তভোগীর অভিযোগ যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ডাঃ মোঃ আকবর হোসেন বলেন, ক্যামেরার সামনে আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনি ক্যামেরা সামনে থেকে সরান না সরালে আমি মান হানি মামলা করবো। আমাকে আপনি চিনেন না। আমি কিন্তু এর আগেও মামলা করে জিতেছি। আপনি ক্যামেরা বন্ধ করেন তাহলে আমি সবকিছু বলবো। পরবর্তীতে ডাঃ আকবর রিপোর্ট এর বিষয় বলেন, আমি পরিক্ষার জন্য প্যাথলজিতে পাঠিয়েছি তবে সেখানে যেই ঘটনা ঘটেছে সে বিষয় আমি অবগত ছিলাম না। রোগী যখন আমার কাছে এসে বলছে তখন আমি জানতে পারলাম রিপোর্ট ভূল হয়েছে। এবং এটি খুবই দুঃখ জনক বিষয়।
ডাঃ এম আর বিশ্বাস বলেন, আমি এ বিষয় অবগত আছি। আমি এখন ঢাকা আছি। ঢাকা থেকে এসে তদন্ত করে যারা যারা এর সাথে জরিত তাদেরকে চাকরিচ্যুত করবো। এবং সাংবাদিকদের সাথে যে মিস বিহাব হয়েছে সেবিষয়ে আমি ক্ষমা প্রার্থী।
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ ফজলুল হক বলেন, আমি শুনেছি বিষয়টি তবে তাদের যে বিষয় ভূল হয়েছে বিধান অনুযায়ী এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।