মোঃ সজল মাহমুদ, বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
যে বয়সে আনন্দ ফুর্তিতে থাকার কথা আর সে বয়সেই পেট আর মাথার উপারের টিন নিয়ে ভাবতে হচ্ছে মান্নান হাওলাদারের। দীর্ঘ ৪১ বছর রিকশা চালিয়ে ভাগ্য ফেরেনি মান্নানের। হ্যান্ডেল ধরেছিলেন জীবকার তাগিদে, তা সচল থাকলেও নেই ইনকামের উৎস রিকশাটি। খেয়ে,না খেয়ে জীবন পাড় করছে এই ৬৫ বয়সী বৃদ্ধ লোকটির পরিবার। বসবাস করছেন অন্যের ঘরে।
রিকশা চালিয়ে ৬ জন ছেলে-মেয়ে ভিতরে ৪ জন বড় করেছেন, তাদের ঘরে ছেলে-মেয়ে হয়েছে। তবে শেষ বয়সে এসে একটু আরাম-আয়েশে জীবন কাটাবেন, তা আর হয়ে ওঠেনি। ছেলে-মেয়ে থাকলেও অভাব-অনটনের কারণে বৃদ্ধ বয়সী পিতা-মাতার দায়িত্ব না নেওয়ায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই আজ রিকশা চালাচ্ছেন মান্নান হাওলাদার।
ছেলে সন্তান থাকলেও দায়িত্ব নেন না বৃদ্ধা মা-বাবার। তাই জীবন যুদ্ধে দু-বেলা দু-মুঠো ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য অন্য কোনো উপায় না পেয়ে রিকশা চালিয়ে ছোট ভাইয়ের ঘরে জীবিকা নির্বাহ করছেন বেতাগীর এই জীবন যোদ্ধা মান্নান।
বরগুনা বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের হাওলাদার বাড়ির মৃত্যু আলী আকবরের ছেলে মান্নান হাওলাদার(৬৫)। এই বৃদ্ধ বয়সে এখনো তাকে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। ৪১ বছর ধরে রিকশা চালান এই বৃদ্ধ।
বৃদ্ধ মান্নান হাওলাদার বলেন, সারা দিন রিকশা চালিয়ে তার যা আয় হয়, তা দিয়ে রিকশা মালিকের ভাড়া মিটিয়ে সামান্য কিছু টাকা থাকে। সে টাকা দিয়েই চালাতে হয় সাংসারের খরচ। ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় নানান জিনিসপত্র কিনতে পারি না টাকার অভাবে। তারপও পরিবারের একটু সচ্ছলতা আনতে দিন-রাত রিকশা চালিয়ে যাচ্ছি। অসুস্থতাজনিতসহ বিভিন্ন কারণে একদিন রিকশা চালানো বন্ধ থাকলে বাড়িতে হয় না অনেক সময় রান্না। সরকার থেকে দেওয়া ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক পান না তারা কোনো সুযোগ-সুবিধা।
তিনি আরো বলেন, আমি জীবনের বেশিরভাগ সময়টা রিকশা চালিয়ে কাটিয়েছি তার বিতরে খুলনাতে ১৬ বছর চট্টগ্রামে ১২ বছর ও আমার গ্রামের বাড়ি বেতাগীতে প্রায় ১৩ বছর মোট ৪১ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পায়ে চালানো রিকশা চালাচ্ছি।
মান্নানের স্ত্রী পারভীন বেগম বলেন, নুন আনতে পান্তা ফুরায় এই সংসারে। এই জবানায় নিজের ঘরেই থাকা যায় না আবার পরের ঘরে দিন কাটাচ্ছি।কোনদিন খেয়ে আবার কোনদিন না খেয়েই জীবন পার করি। জানি না এভাবে আর কত দিন চলবে?
হোসনাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান খান বলেন, এই সমাজে যার মটার চালিত রিকশা কেনার টাকা আছে সেই মাএ মটার চালিত রিকশা ব্যাবহার করতে পারে আর যার টাকা নেই সেই পায়ে চালানো রিকশা চালায়। তবে তার সকল প্রকার সহযোগিতা আমরা পাশে আছি। তাকে বয়স্ক বাত, ১৫ টাকা কেজি চাল সহ সকল সহযোগিতা দিয়ে পরিষদ পাশে থাকবে।
বেতাগী উপজেলা বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সুহৃদ সালেহীন বলেন, ৪১ বছর ধরে রিকশা চালক বৃদ্ধ মান্নান কে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়া হবে।
News Desk/WE